জান্নাতের ৮ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন যারা

জান্নাতের ৮ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন যারা

মুত্তাকীদের জন্য পরকালে নির্ধারিত রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে সফলতা। প্রাচীর বেষ্টিত বাগান ও আঙ্গুর, আর সমবয়স্কা উদ্‌ভিন্ন যৌবনা তরুণী, এবং পরিপূর্ণ পানপাত্ৰ, সেখানে তারা শুনবে না অসার অর্থহীন আর মিথ্যে কথা।’ (সূরা নাবা, (৭৮), আয়াত, ৩০-৩৫)

জান্নাতের আটটি দরজা আছে, প্রত্যেক মুমিন নিজ নিজ, আমল অনুযায়ী সেই দরজাগুলো দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। এই আটটি দরজার নাম কোথাও একসঙ্গে পাওয়া না গেলেও কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় এই দরজাগুলোর নাম পাওয়া যায়।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবে তাকে জান্নাতের দরজাগুলো থেকে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা, এটাই উত্তম। অতএব যে নামাজ আদায়কারী, তাকে নামাজের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে মুজাহিদ, তাকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সিয়াম পালনকারী, তাকে রাইয়্যান দরজা হতে ডাকা হবে। যে সদকা প্রদানকারী, তাকে সদকার দরজা থেকে ডাকা হবে।

এরপর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনার জন্য আমার মা-বাবা কোরবান হোক, সব দরজা থেকে কাউকে ডাকার কোনো প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে সব দরজা থেকে ডাকা হবে? আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, হ্যাঁ। আমি আশা করি তুমি তাদের মধ্যে হবে। (বুখারি, হাদিস, ১৮৯৭)

এই হাদিসে চারটি দরজার নাম পাওয়া যায়।

এক. বাবুস আস-সালাহ (নামাজের দরজা), যারা আন্তরিকভাবে নিয়মিত নামাজ আদায় করবে, তাদের সম্মানে জান্নাতের এই দরজার নাম করা হয়েছে বাবুস সালাহ বা নামাজের দরজা।

দুই. বাবুল জিহাদ (জিহাদের দরজা), যারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর পথে তার জীবন ও সম্পদ দিয়ে জিহাদ করবে তাদের সম্মানে জান্নাতের এই দরজার নামকরণ হয়েছে বাবুল জিহাদ বা জিহাদের দরজা।

তিন. বাবুর-রাইয়ান (এটি কেউ কেউ রোজার দরজা), যারা মহান আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠভাবে রোজা রাখবে, তাদের সম্মানে এই দরজার নামকরণ করা হয়েছে বাবুর রাইয়ান।

চার. বাবুস-সদকা (দানের দরজা), মানুষের প্রয়োজনে যারা তাদের অর্থসম্পদ দিয়ে মানুষকে সহযোগিতা করবে, তাদের সম্মানে এই দরজার নামকরণ হয়েছে বাবুস সদকা।

এ ছাড়া বিভিন্ন সূত্র থেকে আরো যে দরজাগুলোর নাম পাওয়া যায় তা হলো—

পাঁচ. বাবুল আইমান, কেউ কেউ এই দরজাকে বাবুস শাফাআতও বলেছেন। কেউ আবার বাবুল মুতাওয়াক্কিলিনও (তাওয়াক্কুলকারীদের দরজা) বলেছেন। কিয়ামতের দিন যারা নবীজির সুপারিশে বিনা হিসাবে জান্নাতে স্থান পাবে, তাদের সম্মানে এই দরজার নামকরণ হয়েছে। (মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, হাদিস, ৩৬৮)

ছয়. বাবুল কাজিমিনাল গইজা ওয়াল আফিনা আনিন্নাস (রাগ দমনকারী ও লোকের ভুলকে ক্ষমাকারী ব্যক্তিদের দরজা), যারা লোকদের ভুলকে ক্ষমা করে এবং নিজের রাগকে দমন করে, এই দরজার নামকরণ তাদের সম্মানে। (উমদাতুল কারি, ১৬/২৫৪)

সাত. বাবুর-রাদ্বিন (সন্তুষ্টদের দরজা), এই দরজাকে কেউ কেউ বাবুল জিকির, বাবুল হজ, বাবুল ইলম ও বাবু লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ-ও বলে। যারা আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট এবং আল্লাহও যাদের ওপর সন্তুষ্ট, তাদের সম্মানে এ দরজার নামকরণ হয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস, ৩৫৮১)

আট. বাবুত-তাওবা (ক্ষমা প্রার্থনার দরজা), নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে, তাদের সম্মানার্থে জান্নাতের এই দরজার নামকরণ করা হয়েছে। এটি তাওবাকারীদের জন্য সব সময় খোলা থাকে। (জামিউস সগির, হাদিস, ৭৩২০)

 

আপনি আরও পড়তে পারেন